মোঃহিরু মিয়া,ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের নলডাঙ্গা রোডের সেভেন রিংস সিমেন্টের ডিলার মেসাস হাজী রফিউদ্দিন এন্ড সন্স এর ৪৫০ বস্তা চুরি হওয়া সিমেন্ট উদ্ধার ও চুরি কাজে ব্যবহৃত ট্রাক নং-ঢাকা মেট্রো-ট-২০-৫৫৫৩ জব্দ এবং চোর চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বিষয়টি সোমবার (৭ মার্চ) সকালে কালীগঞ্জ থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানান, ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সূপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার। তিনি জানান, সেভেন রিংসের সিমেন্টের ডিলার কালীগঞ্জ শহরের নলডাঙ্গা রোডের মেসার্স হাজী রফি উদ্দিন এন্ড সন্স। এখানে কর্মরত সেভেন রিংস সিমেন্ট কোম্পানীর টেরিটোরি সেরাজুল ইসলাম। এই ডিলারের অধিনে কোম্পানী থেকে সিমেন্ট অর্ডার, সিমেন্ট আনা নেওয়ার কাজ সেরাজুল দীর্ঘদিন করে থাকেন এবং তার পূর্ব পরিচিত চোর চক্রের আরেক সদস্য ট্রাক ড্রাইভার সোহাগ। কথিত ড্রাইভার সোহাগ গত ২৭ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৪টার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল সহ কয়েকটি নং থেকে সেরাজুলের মেবাইলে ফোন করে বলে ভাই রড সিমেন্ট আনা লাগলে আমাকে ফোন দিবেন। তখন সেরাজুল জানায় ২৮ ফেব্রুয়ারী খুলনা লবণচোরা সেভেন রিংসের ফ্যাক্টরী থেকে ৪৫০ বস্তা সিমেন্ট আনতে হবে। ড্রাইভার সোহাগ জানায় তার পরিচিত একটি ট্রাক খুলনা শহরে আছে ঐ ট্রাক ড্রাইভারকে আপনার নম্বরে ফোন দিতে বলছি। এদিন বিকাল ৫টার সময় অজ্ঞাতনামা ড্রাইভার সেরাজুলকে ফোন দিয়ে বলে সোহাগ আপনার নিকট ফোন দিতে বললো। তখন সেরাজুল তাকে খুলনা লবনচোরা সিমেন্ট ফ্যাক্টরী থেকে ৪৫০ বস্তা সিমেন্ট কালীগঞ্জ শহরের মেসার্স হাজী রফি এন্ড সন্সে আনার জন্য বলেন এবং সেরাজুল সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে ড্রাইভারের মেবাইল নম্বরসহ ট্রাক নম্বরও জানিয়ে দেন। এরপর দিন ২৮ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টার দিকে সেরাজুল ঐ ড্রাইভারের মোবাইলে তার নাম জানতে চাইলে তিনি জানায় তার নাম আবু তালেব এবং জানায় সিমেন্ট ট্রাকে লোড হয়ে গেছে একটু পরেই রওনা দেবো। পরদিন ১ মার্চ তারিখে সকাল পর্যন্ত ট্রাক না আসায় ১০টার দিকে ড্রাইভার আবু তালেবের মোবাইলে ফোন দিলে সে জানান বারবাজার মেইন বাসষ্ট্যান্ডে আছি চাকায় একটু সমস্যা হয়েছে চাকাটা পরিবর্তন করে আসছি। এদিন বিকাল ৫টার পরও না আসায় ড্রাইভারের মোবাইলে ফোন দিনে বন্ধ পাওয়া যায়। তখন সোহাগের নম্বরে ফোন দিলে তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তিতে খুলনা লবনচোরা সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ২৮ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০ টায় ট্রাকে ৪৫০ বস্তা সিমেন্ট ডিওসহ রওনা দিয়েছে। যা সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর গেটের সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এরপর সেভেন রিংস ডিলারের পক্ষ থেকে কোম্পানীর টেটিটরি সেলস অফিসার সেরাজুল বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। এই মামলার দায়িত্ব দেওয়া হয় ঝিনাইদহ সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল এ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল এর এসআই খালিদ হাসান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করেন। পরে গোপন সংবাদে জানতে পারেন সিমেন্টসহ চুরি হওয়া ট্রাকের মালিক ট্রাক ড্রাইভার সোহাগ এবং তারা ফ্যাক্টরী থেকে সিমেন্ট লোড করে ওখান থেকে বের হয়ে ঐ ট্রাকের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে ভূয়া নম্বর প্লেট ব্যবহার করেছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫ মার্চ যশোর জেলার খাজুরা মেইন বাসষ্ট্যান্ডের তাহের এন্ড সন্স ফিলিং ষ্টেশনে চুরি কাজে ব্যবহৃত ট্রাকটি জব্দ করেন। এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে সিসি টিভির ফুটেজে এবং সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যশোর জেলার সদর উপজেলার গহরপুর গ্রামের মিন্টু মিয়ার ছেলে আবু তালেব (২১), যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার ছোট খুদড়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে আকাশ হোসেন (২১), যশোর সদর উপজেলার কেসমত রাজাপুর গ্রামের মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে বিল্লাল (৩৫), সদর উপজেলার বাঘারপাড়া উপজেলার সিলিমপুর গ্রামের মৃত কাজী আবুল হোসেনের ছেলে ইনামুল হক (৩৪) এবং যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার জোহরপুর গ্রামের লিয়াকত আলী বিশ্বাসের ছেলে মিলন বিশ্বাস (৩৫) কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আবু তালেবের দেওয়া তথ্যমতে বাঘারপাড়া উপজেলার তৈলকূপ বাজারের ব্যবসায়ী গ্রেফতারকৃত মিলন বিশ্বাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মের্সাস লিয়াকত ষ্টোর থেকে ৪৫০ বস্তা সিমেন্ট উদ্ধার করা হয়। এই চোরচক্র দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারনার মাধ্যমে চুরি সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ মূলক কার্যক্রম করে আসছে। তিনি আরো বলেন এই চোর চক্রের প্রধান ড্রাইভার সোহাগের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। একজন আসামী বাদে সবাইকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসা করা হবে